নোয়াখালী:
বেগমগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার জানান, হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ওষুধের দোকান দেয়ার কথা বলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এই নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিলে সে আর কর্মস্থলে ২ বছর আসতে পারেনি
দুর্নীতির প্রতিভূ জেলা সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারী মো. আবু তাহের নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারী হিসেবে ফের মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে যোগদান করায় স্বাস্থ্য বিভাগে ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী ও জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, আলোচিত এই কেরানী চাকরিকালীন সময়ে অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতি আর চাকরি বাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় গণমাধ্যমেও তার দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সংবাদের প্রেক্ষিতে তার দুর্নীতির তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আজও আলোর মুখ দেখেনি। এর মাঝেই তাকে বদলি করা হয় বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে আবু তাহের হয়ে ওঠেন আরও বেপরোয়া। বদলি ঠেকাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক স্বপন এবং নোয়াখালী-৪ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর স্বাক্ষর জাল করে সুপারিশ হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে বদলি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন আবু তাহের। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিনকে কমিটির সভাপতি, ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. রফিক উস সালেহীনকে সদস্য ও কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইনকে সদস্য সচিব করে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত প্রতিবেদন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালকের অফিসে প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, আবু তাহের বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রধান সহকারী হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালীন অনিয়ম-দুর্নীতি বাদেও অধিকাংশ সময় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতেন।
বেগমগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার জানান, হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ওষুধের দোকান দেয়ার কথা বলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এই নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিলে সে আর কর্মস্থলে ২ বছর আসতে পারেনি। যার অন্যতম প্রমাণ হচ্ছে অক্টোবরের ১২ তারিখে বিভাগীয় পরিচালক বরাবর খোদ নোয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখারের পাঠানো আবু তাহেরের অননুমোদিত অনুপস্থিতির লিখিত প্রতিবেদন। জেলার স্বাস্থ্যখাতে আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগে অর্থের লেনদেন ও প্রতারণার অভিযোগ অনেক আগে থেকেই রয়েছে আবু তাহেরের বিরুদ্ধে। সাম্প্রতি এ বিষয়ে তার অবৈধ অর্থ লেনদেনের কথপোকথনের একটি কল রেকর্ড গণমাধ্যমের হাতে আসে। সেখানে আবু তাহেরে এক যুবককে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগের বিনিময়ে তাকে অর্থ সংগ্রহ করে দেয়ার অনুরোধ জানান। এই কথোপকথনের মাঝে অবৈধ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগের বিষয়টি স্পষ্ট প্রকাশ পায়। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশেপাশে ফার্মেসী দোকান তৈরির প্রস্তাব দিয়ে বেশ কিছু ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে আবু তাহেরের বিরুদ্ধে। চাকরি দেয়ার প্রলোভনে বিভিন্ন নারী-পুরুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি। নোয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার মানবজমিনকে বলেন, তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।