• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
আমাদের দেশকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে: মো. শাহজাহান ফ্যাসিস্ট শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে: জামায়াত নেতা ইয়াছিন আরাফাত নোবিপ্রবিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত পাসপোর্টে হয়রানি বন্ধ ও জনগনের সাথে সুসম্পর্ক উন্নয়নে বিদায়ী জেলা পুলিশের ডিআইও-১ এর প্রশংসনীয় উদ্যোগ! নোয়াখালীতে “দ্যা হান্ড্রেড বল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট” এর শুভ উদ্বোধন সুধারামে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ প্রশাসন সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে- কামরুল ইসলাম ব্যবসায়ীদের আর্তনাদ কবিরহাটে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম ( বিএমএসএফ)’র  সাধারণ সভা জেলা প্রশাসকের কাছে ৪ শত কম্বল হস্তান্তর করলো ‘আশা’ সোনাপুর পৌর বাসস্ট্যান্ডটি যেভাবে মার্কেটে পরিণত হচ্ছে

ব্যবসায়ীদের আর্তনাদ

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪

 

 

বিশেষ প্রতিনিধি ॥

দীর্ঘ ৫৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী নোয়াখালী পৌরসভার সোনাপুর পৌরবাজারকে কেন্দ্র করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল পাড়ে গড়ে উঠেছিল বেশ কয়েকটি বহুতল ভবনসহ প্রায় ৪ শতাধিক দোকানপাট। ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট সোনাপুর জিরোপয়েন্ট থেকে পশ্চিম দিকে বাসটার্মিনাল এবং জিরোপয়েন্ট থেকে দক্ষিণ দিকে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সড়কে অগ্রণী ও সোনালী ব্যাংক পর্যন্ত বিভিন্ন সময় গড়ে উঠা এসব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।

ভেঙে ফেলা দোকান মালিকরা জানান, বর্তমানে দোকান-ব্যবসা হারিয়ে তারা আজ নিঃস্ব-সর্বস্বান্ত। তাদের প্রতিটি দোকানে কমপক্ষে ৪-৫ জন করে মালিক ও কর্মচারী ছিলেন। অর্থাৎ ভেঙে ফেলা ৪শ’ দোকানের লোকসংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার জন। আজ ৬ বছর অতিবাহিত হচ্ছেÑ অথচ এদেরকে পুনর্বাসনে জেলা প্রশাসন বা পৌরসভা কোনো কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করছে না। বিভিন্ন স্থানে ধরনা দিয়ে কোনো কূল-কিনারা করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এসব ব্যবসায়ী। সোনাপুরের আশপাশে কান পাতলে বাতাসে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আর্তনাদ।
সরকারি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করলে উচ্ছেদের সমূহ হুমকি একটি মৌলিক সত্য। রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে যেখানে নাগরিক বা ব্যক্তিগত সম্পত্তিও সরকার একোয়ার করার অধিকার রাখে, যা ভূমি আইনের তফসিলে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। সেখানে সরকারি সম্পত্তি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ একটি অশনি সংকেত ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে এটিও সত্য যে অজ্ঞতা আর অসচেতনতার রাহুগ্রাসে আক্রান্ত হয়ে প্রায়শই এমন ভুলটি করে থাকেন মানুষজন। দেশের অন্য স্থানের মতো নোয়াখালীতেও বিভিন্ন সময় অবৈধ দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। এ উচ্ছেদ বরং দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যাপার। সরকার দেশের সার্বিক উন্নয়ন কাঠামোকে গতিশীল ও ত্বরান্বিত করতে এসব উচ্ছেদ অভিযানসহ নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। আর সে নিরিখেই জনকল্যাণে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় নোয়াখালীকে জলাবদ্ধতা ও যানজটমুক্ত আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তুলতে তৎকালীন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ জাকারিয়ার নেতৃত্ব জেলা প্রশাসন এ উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে।

ঐতিহ্যবাহী এ বাজার স্থানীয় এলাকাবাসী এমনকি আশপাশের উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি-আলেক্সান্ডারের মানুষের কাছেও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। আর এ ক্ষেত্রটাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বাজার ব্যবস্থা। কিন্তু ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম হিসেবে প্রায় ৪ শতাধিক দোকানপাট ভেঙে ফেলায় এর সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী-কর্মচারী মিলিয়ে ২ হাজার মানুষ বেকার ও নিঃস্ব হয়ে পড়েন। এর সঙ্গে যুক্ত আছেন এদের পরিবার-পরিজন। এতে করে ব্যবসায়ীদের কাছে আকস্মিক প্রলয়ের মতো একটি মহাদুর্যোগ মনে হয়েছে এটি।
এ ব্যাপারে কয়েকজন ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে জানান, উচ্ছেদকৃত ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই বিভিন্ন ব্যাংক, সমিতি ও এনজিও থেকে লাখ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। এখন উচ্ছেদের ফলে তারা একদিকে যেমন ঋণগ্রস্থতার দায়ভার কাঁধে নিয়ে চোখে সর্ষেফুল দেখছেন, অন্যদিকে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাদের দোকানের মালামালগুলো নষ্ট হয়ে লাখ লাখ টাকার পুঁজি হারিয়ে এখন নিঃস্ব-সর্বস্বান্ত।
তারা আরো জানান, স্থানীয় ও জেলার চরাঞ্চলসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরাই মূলত এ বাজারের ক্রেতা। চরাঞ্চলের এসব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যবসা করতে গেলে বাকিতে লেনদেন করতে হয়। এ বাজারের অনেক ব্যবসায়ী কোটি টাকা পর্যন্ত বাকিতে লেনদেন করেছেন। এখন দোকান না থাকায় বাকি যাওয়া টাকাগুলো উদ্ধারসহ নানা ঝক্কি-ঝামেলায় দিন কাটছে তাদের। আবার সোনাপুর বাজার ব্যবসায়ীরাও জেলার বাণিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনী, চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বড় বড় প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ টাকা দেনা। বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবেনÑ সে চিন্তায়ই এখন তাদের পেয়ে বসেছে।

ব্যবসা-বাণিজ্য-পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া এসব ব্যবসায়ী বর্তমানে দিশেহারা। পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে আগামী দিনগুলো অতিবাহিত করবেন সে চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠছেন। এরই মধ্যে অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার পাশাপাশি শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় অনেকেই জেলা প্রশাসকের কাছে নানাভাবে আকুল মিনতি জানিয়ে আসছেন তাদেরকে পুনর্বাসন করার জন্য। জেলা প্রশাসকও নাকি বলেছেন, একটি দরখাস্তের মাধ্যমে বিস্তারিত সব জানিয়ে তাকে দেয়ার জন্য। সে প্রস্তুতিও চলছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে বেশ কয়েকজন সমাজপতি ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ জেলা প্রশাসক ও পৌর প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সোনাপুর বাজারের মূল ভূখণ্ডে যে মার্কেটটি তৈরি হয়েছে তাতে কেউ কেউ ক্ষমতা ও দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে নিজ নামে ও পরিবারের অপরাপর সদস্যদের নামে ২৫-৩০টি করেও দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন। যা অন্যের হক মারার শামিল। যারা একের অধিক দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন তাদের থেকে বাড়তি দোকানগুলো নিয়ে অন্যদের মাঝে বিতরণ করাই হবে অসহায় ব্যবসায়ীদের সহায়। এছাড়া একাধিক দোকান মালিকদের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে তাদের কাছে কৈফিয়ত তলব করা প্রয়োজনÑ কিভাবে এরা এতোগুলো দোকানের মালিক-দখলদার হলেন?

বোদ্ধা মহল মনে করেন, ভাঙায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার দিয়ে দোকান বরাদ্দ দিলে অনেকে এ যাত্রায় বেঁচে যেতেন। এতেও যদি স্থান সংকুলান না হয় তাহলে বাজারের মসজিদ সংলগ্ন অগভীর এবং অনেকটা অপ্রয়োজনীয় অবস্থায় পড়ে থাকা পুকুরটা ভরাট করে সেখানে একটি মার্কেট নির্মাণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা যেতে পারে। তবে সেটা হতে হবে সরাসরি জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে। পুকুরের উত্তর পাড়ে বেশ কিছু জায়গা ভরাট করে সেখানে কাঁচা-পাকা ঘর নির্মাণ করে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত ৪ শতাধিক দোকান মালিকের মাঝে বিতরণ করলে বেঁচে যাবে ২ হাজার দোকান কর্মচারী ও মালিক এবং তাদের পরিবার


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ
No comments to show.