নোয়াখালী প্রতিনিধি।
স্ত্রী ও তিনপুত্র নিয়ে সংসার। খেয়ে না খেয়ে অন্যের কাজ-কর্ম করে কোনভাবেই চলছে দিনাতিপাত। বর্তমানে ঘর ভিটির জায়গাটুকুও নেই। কোথাও নেই মাথা গোঁজার নিজস্ব ঠিকানা। কি করবেন, তাও জানা নেই। পৈত্রিকসূত্রে মালিকীয় ও ভোগদখলীয় সম্পদের সবটুকু হারিয়ে এখন নি:স্ব ও অসহায় জীবন তার।
সরেজমিনে গিয়ে নোয়াখালী সদরের নোয়াখালী ইউনিয়নের চরএলাহিতে অন্যের জায়গায় খুপরি ঘরে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে দেখা গেছে আবদুল কাদের ওরফে নবির উদ্দিনকে।
নোয়াখালীর হাতিয়ায় পৌর এলাকার লক্ষীদিয়া মৌজায় প্রতারনা করে কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে এক ভাগিনার বিরুদ্ধে। একমাত্র সম্পদ হারিয়ে ও ভাগিনার ছলচাতুরিতে প্রতারিত হয়ে সমাজের বিভিন্নমহলে বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসহায় ও নিরীহ মামা আবদুল কাদের ওরফে নবির উদ্দিন।
জানা যায়, ২০২১ সালে ভাগিনা আবদুল হামিদ ওরফে বিপ্লব তার মামাকে তিন শতাংশ সম্পত্তি হেবা প্রদানের জন্যে অনুনয়-বিনয় করে ও নানাভাবে পুশলিয়ে রাজি করেন। এরপর একপর্যায়ে, আবদুল হামিদ তার মামাকে হাতিয়ার সাব-রেজিস্ট্রার দীর্ঘ দিনের জন্যে ছুটিতে যাচ্ছেন বলে অজুহাত সাজিয়ে তড়িগড়ি করে এনে ওই মৌজায় আবদুল কাদের ওরফে নবির উদ্দিনের রের্কডীয় ও ভোগদখলীয় যা সর্বমোট ১ একর ৯২ শতাংশ সমুদয় সম্পত্তির হেবা দলিল সম্পাদন করে নেয়।
আবদুল কাদের অভিযোগ করেন, তিনি দলিল সম্পাদনের সময়ে ওই দলিলের বিষয়াবলী জানতে চাইলে, সাব রেজিষ্ট্রার এজলাস ছেড়ে নেমে যাবেন, পরে পড়া যাবে বলে এমন আশ্বাস দিয়ে দ্রুতই সহি-স্বাক্ষর করে নেয়। এরপর আবদুল হামিদ তার মামা আবদুল কাদেরকে ওই সম্পত্তির পরিবর্তে অন্যত্র সম্পত্তি না দিয়ে কিংবা কোন ধরনের দায় দেনা পরিশোধ না করে নানা ধরনের তালবাহনা ও ছলচাতুরির আশ্রয় নেয়।
বর্তমানে ওই সম্পত্তির ঘটনার নিষ্পত্তি দাবি করলে আবদুল হামিদের সাথে হাতিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তার সম্পর্ক রয়েছে এমন ধরনের হুমকি-ধমকি ও ভয়-ভীতি প্রদান করছে। আবদুল কাদের আরো অভিযোগ করেন, সম্প্রতি তার ভাগিনা আবদুল হামিদের কাছে সংঘটিত প্রতারনার বিষয়টি সমাধানের জন্যে যোগাযোগ করলে আবদুল হামিদ তাকে জেলা পরিষদের ক্ষমতারও দাপট দেখান।
আবদুল কাদের জানান, তার ভাগিনা আবদুল হামিদের তত্বাবধায়নে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় বিভিন্ন ঠিকাদারদের এবং সরকারের বিভিন্ন ধরনের মালামাল রক্ষিত থাকে। তিনি ওইসব মালামাল সরিয়ে নিয়ে আবদুল কাদের ওরফে নবির উদ্দিনকে চুরির অভিযোগ সাজিয়ে শায়েস্তা করার হুমকি দেন। এমনকি তাকে বিভিন্ন ধরনের বেনামী মামলায় আসামী করে জেলহাজতে পাঠানোরও হুমকি দেয় আবদুল হামিদ। আবদুল হামিদের দম্ভোক্তি, হুমকি, ধমকি ও বিভিন্ন ধরনের চক্রান্তের কথা শুনে আবদুল কাদের অনেকটা ভয়ে-ভীত হয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন।
এদিকে, ধূর্ত আবদুল হামিদ নিজের সংঘটিত প্রতারনা ও জালিয়াতি পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে ওই সম্পত্তি দ্রুত অন্যত্র বিক্রয় করে নি:স্বত্ববান হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেছেন বলে জানা যায়। একপর্যায়ে, ঘটনাটি আবদুল কাদেরের অপরাপর ভাইয়েরা জানতে পারেন। তারা এ বিষয়ে আবদুল হামিদকে জিজ্ঞাসা করলে হামিদ ঘটনাটির সত্যতা স্বীকার করে যতদ্রুত সম্ভব এর সমাধান করবেন বলেও আশ্বাস দেন।
অত:পর আবদুল হামিদ গত এক বছর নানা ধরনের তালবাহনায় সময় পেরিয়ে বর্তমানে সমাধানের পথ থেকে সরে দাঁড়ান। হামিদ তার মামাদের অর্থ্যাৎ আবদুল কাদেরের ভাইদের বলে দেন যে, তিনি বিক্রিত সম্পত্তি বিষয়ে কিছুই করতে পারবেননা। বলেন, আমি যার কাছে বিক্রয় করেছি, আপনারা তার কাছ থেকে নিয়ে নেন।
এ বিষয়ে আবদুল হামিদ বিপ্লবকে ফোন করলে ঘটনার বিষয়ে পরে বলা যাবে জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।আবদুল হামিদ নোয়াখালী জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় হাতিয়ায় কর্মরত কর্মচারী বলে সূত্র জানায়।