আগামীকাল মঙ্গলবার মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও শহীদদের যথাযথভাবে শ্রদ্ধা জানানো হবে দিনটিতে। শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রায় প্রস্তুত শহীদ মিনার। প্রতিবারে মতো এবারও শ্রদ্ধা জানাতে শিল্পীর আল্পনায় সেজেছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। রাত পোহালেই শহীদদের স্মরণে ফুলে ফুলে ভরে ওঠবে শহীদ মিনারের বেদী।
জাতির সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছর প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ। পাশাপাশি সাধারণ জনগণের উপস্থিতিতে ভাব-গম্ভীর পরিবেশে পালিত হয় দিনটি।
২১শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে প্রাণ ফিরে পেয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশের এলাকা শহীদ মিনার চত্বর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহীদ মিনার এলাকার রাস্তা ও রাস্তাসংলগ্ন দেয়ালগুলো ধুয়েমুছে রঙ করা হয়েছে, আলপনা এঁকেছেন শিল্পীরা, সেখানে লেখা হয়েছে ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন স্লোগান, গানের কলি, ভাষা নিয়ে লেখা বিভিন্ন কবিতার পঙক্তি ও শ্লোক।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হয়েছে আগেই। বেদিতে আঁকা হয়েছে আলপনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা আলপনা এঁকে রঙের তুলিতে সাজিয়ে তুলেছেন মিনার প্রাঙ্গণ। চারপাশের দেয়ালগুলোতেও রঙের আঁচড়। বাহান্ন থেকে একাত্তরের গৌরবগাঁথা, উত্তাল দিনগুলোর চিত্রকর্ম আর কবি-সাহিত্যিকদের উক্তিতে সাজিয়ে তোলা হয়েছে দেয়াল।
গত দুই বছর করোনার কারণে শ্রদ্ধা জানাতে বিধিনিষেধ ও নিয়মকানুন থাকলেও এবার সেটি থাকছে না। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, গত বছর আমরা নানা ধরনে প্রতিকূলতার মধ্যে অমর একুশ উদযাপন করেছি। অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বলছি, এবার যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তা উদযাপন করতে পারবো।
রাষ্ট্রীয় আচার অনুযায়ী, ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহর ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক, ঢাকায় বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করবেন।
২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচল ও সব ধরনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এদিন সন্ধ্যা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পাস বা আইডি কার্ড ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সবাইকে পলাশী ক্রসিং, এসএম হল ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। কোনোভাবেই অন্য কোনও রাস্তা ব্যবহার করে শহীদ মিনারে প্রবেশ করা যাবে না।
শহীদ মিনারের পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। পাশেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাদে তৈরি করা হয়েছে ঘোষণা মঞ্চ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ প্রাঙ্গণে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কন্ট্রোল রুম, ফায়ার সার্ভিস ও প্রাথমিক চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমেই অমর একুশের কর্মসূচি শুরু হয়। সেজন্য সব আয়োজন ও সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
সোমবার বিকালে র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেন, জঙ্গি হামলার কোনও হুমকি নেই। তবে যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সর্বোচ্চ নজরদারি থাকবে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সালাম, জব্বার, রফিক, বরকতের মতো বাঙালি সূর্যসন্তানদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এই বাংলার রাজপথ। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে শত্রুর বুলেটের মুখে বুক পেতে দেন তারা, ছিনিয়ে আনেন বাংলায় কথা বলার অধিকার।