নোয়াখালী>
নোয়াখালী সদর উপজেলায় বীর নিবাসের নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে মো. রাসেল নামে এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ করায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামের প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। সরেজমিনে গেলে নিম্নমানের কাজে এলাকাবাসীও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বীরমুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস জাগো নিউজকে বলেন, আমার বাবার আত্মত্যাগের জন্য উপহার স্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে একটি ‘বীর নিবাস’ দিয়েছেন। ঠিকাদার রাসেল নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরু করায় আমরা প্রতিবাদ করি।
পরে ঠিকাদারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, সরকারি কাজ এর চেয়ে বেশি ভালো হবে না। পরে তাকে বারবার অনুরোধ করলে তিনি অতিরিক্ত মালামাল বাবদ আমার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন। আমি ভালো কাজের স্বার্থে তাকে নগদ ৩০ হাজার টাকা দিই। এছাড়া আরও ৩০ হাজার টাকা ছাদ ঢালাইয়ের সময় দেবো বলেও জানাই। তবুও কাজের মান খারাপ হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করি।
জান্নাতুল ফেরদাউসের ছেলে আমির হোসেন বলেন, ঘর নিয়ে প্রতিবাদ করে আমরা পুরো পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছি। ঠিকাদার রাসেল ও তার লোকজন আমাদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর পেয়েছি। কিন্তু এ ঘরে নির্ভয়ে না থাকতে পারলে তো শান্তি পাবো না। প্রশাসনের কাছে আমরা নিরাপত্তাসহ সঠিক বিচার চাই।
জান্নাতুল ফেরদাউসের আরেক ছেলে ইকবাল হোসেন বলেন, ইট, বালু, সিমেন্টও নিম্নমানের। এসব মালামাল দিয়ে ঘর নির্মাণ করে সে ঘরে তো থাকা যাবে না। তার চেয়ে আমাদের কুঁড়েঘরই অনেক ভালো। শান্তিতে ঘুমানো যায়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে ‘অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় বীর নিবাসের নির্মাণকাজ চলছে। এতে নোয়াখালীর সদর উপজেলায় ১০৪টি বীর নিবাস নির্মিত হচ্ছে। প্রায় ৪ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত প্রতিটি ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। বীর নিবাসে দুটি শোওয়ার ঘর, একটি রান্নাঘর, একটি খাবার ঘর ও দুটি বাথরুম থাকছে। এর মধ্যে নয়টি বীর নিবাসের নির্মাণকাজ করছেন মেসার্স রাসেল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার মো. রাসেল।
এদিকে, ঠিকাদার মো. রাসেল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বীর নিবাস নির্মাণ করা হচ্ছে। তারা অভিযোগ করায় কাজ বর্তমানে বন্ধ আছে। তবে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। কিছু ইট খারাপ যেতে পারে। প্রকৌশলী বললে তা পরিবর্তন করে দিতে পারি।
তবে ওই পরিবারের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেওয়ার একটি অডিও রেকর্ড জাগো নিউজের হাতে রয়েছে। সেখানে ঠিকাদার রাসেলকে ভুক্তভোগী পরিবারটিকে হুমকি-ধামকি দিতেও শোনা যায়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। হয়তো ঠিকাদারের সঙ্গে তাদের ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে। টাকা নেওয়ার বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমেদ লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। পরীক্ষা করে যদি নিম্নমানের সামগ্রী পাওয়া যায়, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।