নোয়াখালীতে ২৪ ঘন্টার টানা বৃষ্টিতে আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলা শহর মাইজদীতে ১২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে শহরের অনেক সড়ক, দোকানপাট ও বাসাবাড়ি। বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জেলা শহর মাইজদী ফকিরপুরের বাসিন্দা সাংবাদিক এ.আর আজাদ সোহেল বলেন, জেলায় ভয়াবহ বন্যার পর গত কয়েকদিন বৃষ্টির তীব্রতা কমে ঝলমলে রোধ ওঠায় বন্যার পানি নেমে গিয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার থেকে আবারো বারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় আমার বসতঘরে পানি ওঠে গেছে। এতে ছোট দুই বাচ্চাকে নিয়ে ঘরে থাকা মুশকিল হয়ে ওঠায় দুপুরের পর শশু বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছি। ফকিরপুরের বেশিরভাগ ড্রেন সরু ও ময়লা-আর্বজনায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নামতে পারছে না। তাই জলাবদ্ধতা তৈরী হয়ে এলাকায় এমন দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উচ্চ পর্যবেক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে নোয়াখালীতে গতকাল শুক্রবার রাত থেকে কখনো মাঝারি, কখনো ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। জেলা শহর মাইজদীতে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে ১২৪ মিলিমিটার। বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
শনিবার সকাল থেকে জেলা শহর মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিণারায়ণপুর ও বিশ্বনাথ, দত্তেরহাট গোপাই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওই সব এলাকার অনেক সড়ক ডুবে গেছে। অনেকের বসতঘরে পানি ওঠে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হন সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত প্রায় দুই সপ্তাহ তুলনামূলক বৃষ্টি কম হওয়ায় এবং রোদ থাকায় বন্যার পানি অনেকটাই নেমে গিয়েছিল। কিন্তু এখন সড়কগুলো আবার ডুবে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে জেলা শহর মাইজদীর টাউন হল মোড়ের ফ্ল্যাট রোড। সড়কটির দুই পাশের অনেক দোকানে পানি ডুকে পড়েছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে রেডক্রিসেন্ট, প্রেসক্লাব, জেলা জজ আদালত চত্বর ও সামনের সড়ক।
টাউন হল মোড় এলাকার ব্যবসায়ী রুমন উদ্দিন বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে যায়। সকাল থেকে কয়েক বার দোকানের ভিতর থেকে পানি বাহিরে ফেলেছি। কিন্তু লাভ হয়নি, বৃষ্টিতে আবারো পানি জমে গেছে। পানির কারণে দোকানে ক্রেতারা আসতে চায় না। লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসাইন বলেন, বন্যার পানিতে বাড়িঘর ডুবে ছিল এক মাসের বেশি সময়। এখন আবার বৃষ্টিতে বাড়িতে পানি ওঠার উপক্রম হয়েছে। পানিনিষ্কাশনের কোনো পথ নেই। বাসিন্দাদের ভোগান্তি দূর করার কথা সবাই বলেন। কিন্তু কাজের কাজ কেউ করেন না।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান খান বলেন, টানা বৃষ্টিতে আবার বন্যা হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব উপজেলায় খোঁজখবর রাখছি। নতুন করে কেউ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন না। বেগমগঞ্জ উপজেলায় প্রায় আড়াই হাজার মানুষ এখনো আশ্রকেন্দ্রে রয়েছেন। কারণ, উপজেলাটির কিছু এলাকায় এখনো বাড়িতে পানি রয়েছে। তাই বাসিন্দারা বাড়ি ফিরতে পারছেন না।