নোয়াখালী প্রতিনিধি :
জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ও বানোয়াট কাগজপত্র সৃজন করে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারী জেনারেল হাসপাতালের চৌহদ্দির জায়গা দখল করে ফার্মেসী ও ক্যাণ্টিন করার অভিযোগ ওঠেছে গোলাম মর্তূজা মুন্নার বিরুদ্ধে।
দুদক বরাবরে জনৈক আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত অভিযোগে জনস্বার্থে বলা হয়েছে, মেসার্স আল আমিন ফার্মেসী ও মেসার্স আল আমিন এণ্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মর্তুজা মুন্না সংঘটিত দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় বনেছেন।
মুন্নার সংঘটিত অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিষয়ে গত ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবরে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্বাŸধায়ক হেলাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদনও এমন অভিযোগের সত্যতা রয়েছে ।
দুদক বরাবর প্রেরিত অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, মুুন্না বিগত বিএনপির সরকারের আমলে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারী হাসপাতালে মেসার্স আল আমিন ফার্মেসী ও মেসার্স আল আমিন এণ্টারপ্রাইজ নামীয় প্রতিষ্ঠানের মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে জায়গা বরাদ্ধ নেয়ার টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহন করেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, আল আমিন ফার্মেসী ও মেসার্স আল আমিন এণ্টারপ্রাইজকে হাসপাতালের ভেতরে সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে ২ আগষ্ট ২০০৬ তারিখে শুধুমাত্র স্থানীয় পত্রিকায় কোটেশন প্রকাশিত হয়। এতে দরপত্র গ্রহণের সর্বশেষ তারিখ নির্ধারিত ছিল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরের দিন। অর্থ্যাৎ ৩ আগষ্ট ২০০৬ তারিখ। অথচ, পিপিআর-২০০৩ অনুসারে দরপত্র আহবানের সময়সীমা ২১ (একুশ) দিন আর বিশেষ ক্ষেত্রে ১৪ (চৌদ্দ) দিন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সে সময়ের তত্বাবধায়ক ডা. জাহাঙ্গীর চৌধুরী কোন বিধি বিধানই অনুসরন করেননি।
অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তত্বাধায়কের প্রতিবেদনে সরকারী জমিতে ঔষুধের দোকান স্থাপনের জন্য জাতীয় পত্রিকার পরিবর্তে শুধুমাত্র স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়াকে অনিয়ম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এতে সে সময়ের তত্বাধায়ক জাহাঙ্গীর চৌধুরী ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সুবিধার বর্শবর্তী হয়ে মুন্নাকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে এ অন্যায়ের সঙ্গ হন।
অপরদিকে, অর্থ বিভাগ কর্তৃক জারীকৃত আর্থিক ক্ষমতা অর্পন নীতিমালা-২০০৫ অনুযায়ী সরকারী ভূমি ইজারা, ক্যাণ্টিন ইজারা তথা অন্যান্য ইজারার ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে নিলাম বা টেন্ডার বা কোটেশনের শর্র্তে বিভাগীয় প্রধানের এক বছরের জন্য পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু আল আমিন ফার্মেসী ও মেসার্স আল আমিন এণ্টারপ্রাইজের ক্ষেত্রে তা পালন করা হয়নি।
এছাড়া, মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেখে ১০ (দশ) বছরের জন্য সরকারী সম্পত্তি লীজ গ্রহণের চুক্তিনামা সম্পাদন করা সরকারী নিয়ম-নীতির পরিপন্থি ও স্পষ্টত ক্ষমতার অপব্যবহার বলে মনে করেন বর্তমান দায়িত্বশীল তত্বাবধায়ক ডা. হেলাল উদ্দিন।।
দাখিলকৃত অন্যান্য কাগজপত্রের মধ্যে মেসার্স আল আমিন ফার্মেসী, মো. সামসুুল করিম ও নুরুল ইসলাম নামীয় তিনটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড মাইজদী কোর্ট, নোয়াখালীর নামে একই তারিখে, একই স্মারকে একই ব্যাংকের প্রত্যয়ন দাখিল করেন। তিনটি প্রতিষ্ঠান একই ব্যাংক হতে একই স্মারকে ও একই তারিখে তিনটি প্রত্যয়ন সংগ্রহ করা বেআইনী, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কর্ম বলে ধারণা করেন তত্বাবধায়ক হেলাল উদ্দিন।
অপরদিকে, মেসার্র্স আল আমিন ফার্মেসী ও নুরুল ইসলামের একই স্মারক ও একই তারিখ একই নম্বারে ২টি করপত্র সনদ সংগ্রহ করা কোনভাবেই সহিশুদ্ধ নয় বলে মনে করছেন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্বাবধায়ক হেলাল উদ্দিন।
এছাড়া তিন ব্যক্তির একই ভ্যাট সনদ, একই তারিখে, একই টিন নম্বরে হওয়া আইনত ও ন্যায়ত বেআইনী এবং চরম স্বজনপ্রীতি বলে প্রতিয়মান হয় তত্বাবধায়কের তদন্তে। যা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। আল আমিন ফার্মেসী ও মেসার্স আল আমিন এণ্টারপ্রাইজের দাখিলকৃত কাগজপত্রে সত্যায়িত ব্যক্তির পদ, পদবী, স্বাক্ষর ভুয়া ও বানোয়াট বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাছাড়া, আল আমিন ফার্মেসী ওষুধের দোকানের এবং রেষ্টুরেণ্টের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলে গত ১৮ জুলাই ২০০৬ তারিখে আবেদনটি মন্ত্রণালয় হতে তত্বাবধায়কের বরাবরে পাঠনো হয়। যার নিষ্পন্নের দায়িত্ব তত্বাবধায়কের হাতে দেয়া হয়েছে। কিন্তু, তার নিষ্পত্তি না করে আল আমিন ফার্মেসী বরাদ্ধ দিতে নোয়াখালীর একই ঠিকানা ও একই মালিকের দুটি স্থানীয় পত্রিকায় কোটেশন প্রকাশ করা হয়। যা আইনত বেআইনী ও স্পষ্টত দুর্নীতি বলে মনে করেন তত্বাবধায়ক।
নুরুল ইসলামের ড্রাগ লাইসেন্সের মেয়াদ ছিল ১৫ সেপ্টেম্ব ২০০৫ তারিখ পর্যন্ত। তা সত্বেও বিগত ৯ আগষ্ট ২০০৬ তারিখে মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স নিয়ে কোটেশনে অংশ গ্রহণের সুযোগ সম্পূর্ণ বেআইনী ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রতিয়মান হয়েছে তত্বাবধায়কের পর্যালোচনা প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়েছে, মেসার্স আল আমিন ফার্মেসী ও মো. সামসুল করিমের নামে জমা করা সূত্রবিহিন ড্রাগ প্রত্যয়ন পত্রটিও ভুয়া, জাল ও বানোয়াট হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় হাসপাতাল-৩ শাখা কর্তৃক সরকারী হাসপাতালে ন্যায্যমূল্যে ঔষুধের দোকান, ফার্মসী, চা নাস্তা খাবারের দোকান, রেষ্টুরেণ্ট স্থাপন, ব্যবস্থাপনা এবং সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য কমিটি গঠনের নির্দেশনা রযেছে।
জেলা হাসপাতালসমূহে একজন প্রশাসনিক কর্মকতা ও একজন হিসাবরক্ষক কর্মকর্তাসহ ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ কমিটি গঠনকালে দুইজন কর্মচারীকে অন্যায় ও বেআইনীভাবে কমিটিতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। যাতে সরকারে নীতিমালা লঙ্গন, স্বত্ব ও স্বার্থের চরম ক্ষতি সাধন করে আল আমিন ফামেসীকে সুবিধা দেয়ার দায় ডা. জাহাঙ্গীর চৌধুরীকে দেয়া হয়।
গোলাম মর্তুজা মুন্নার সংঘটিত অন্যায় ও অপরাধে সম্পৃক্ততার দায়ে সাবেক তত্বাবধায়ক ডা. জাহাঙ্গীর চৌধুরীর অবসরজনিত সরকারী সুযোগ সুবিধাও বন্ধ রয়েছে বলে পর্যালোচনা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন তত্বাবধায়ক হেলাল উদ্দিন।
এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আল আমিন ফার্মেসী ও মেসার্স আল আমিন এণ্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মর্তুজা মুন্নাকে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন না ধরায় তার মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।