নোয়াখালী প্রতিনিধি:
‘আমার মেয়ে তো নির্দোষ। তাকে কেন হত্যা করা হলো? আমার ছেলেকে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন।’ অশ্রুকাতর চোখে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই কথাগুলো বলেছিলেন নোয়াখালীতে জোড়া খুনের ঘটনায় নিহত ফাতিমা আজিম প্রিয়ন্তীর বাবা ফজলে আজিম কচি।
মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নোয়াখালী পুলিশ সুপারের (এসপি) দেওয়া বক্তব্যকে মেনে নিতে পারছেন না বলে আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান কচি। তিনি বলেন, ‘এসপি সাহেব তো এককভাবে বলে গেছেন। ওই ছেলের (গ্রেপ্তার আলতাফ হোসেন) কথা সত্য হোক বা মিথ্যা হোক তাঁর কথা এককভাবে বলে গেছেন। তিনি (আলতাফ) তো বাঁচার জন্য ভালো-মন্দ অনেক কথাই বলবেন। স্থানীয়রা যখন তাঁকে আটক করেন তখনো তিনি অনেক ধরনের কথাবার্তা বলেছেন। আমার ছেলে ও আমাকে কিছু বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমি চাই আমার স্ত্রী ও মেয়ে হত্যার সঠিক বিচার হোক।’
গতকাল বুধবার সকালে নোয়াখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গুপ্তাংক এলাকার বার্লিংটন মোড়ের নিজেদের বাড়িতে নুর নাহার বেগম (৪২) ও তাঁর মেয়ে ফাতিমা আজিম প্রিয়ন্তীকে (১৬) কুপিয়ে জখম করা হয়। নুর নাহার ঘটনাস্থলে মারা গেলেও মেয়েকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। এ ঘটনার সময় দৌড়ে পালাতে থাকলে স্থানীয় লোকজন আলতাফ হোসেনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
নিহত নুর নাহার বার্লিংটন মোড় এলাকার ফজলে আজিম কচির স্ত্রী। প্রিয়ন্তী তাঁদের মেয়ে। গ্রেপ্তার আলতাফ লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নের চরমেহের গ্রামের মৃত আবুল কালামের ছেলে।
এদিকে নুর নাহার বেগম ও তাঁর মেয়ে প্রিয়ন্তী হত্যার ঘটনায় গতকাল রাতে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি ওমানপ্রবাসী আলতাফ হোসেন। অপর দিকে আলতাফকে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন আটক করেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে আলতাফ বলেছিলের ঘটনার সঙ্গে আরও দুজন জড়িত ছিলেন। স্থানীয়দের প্রশ্ন আলতাফ গ্রেপ্তার হলেও অজ্ঞাত অপর দুই ব্যক্তি কে? তবে এ বিষয়ে পুলিশ বলছে আলতাফ নিজেকে বাঁচানোর জন্য বা ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে এ কৌশল করেছেন।
গতকাল রাত ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামি আলতাফের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। ১ নম্বর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মোসলেহ উদ্দিন মিজান ১৬৪ ধারায় আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি রেকর্ডের পর আদালতের নির্দেশে তাঁকে রাত ১১টার দিকে নোয়াখালী জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘হত্যার ঘটনায় নিহত নুর নাহারের স্বামী বাদী হয়ে গতকাল বিকেলে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে ওই মামলায় তিনি কোনো আসামির নাম উল্লেখ না করে একাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করেছেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার আলতাফকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’