নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালী সদর উপজেলার নেয়াজপুরে এলাকার সচেতন নাগরিক ও অভিভাবকবৃন্দ জনস্বার্থে দেবীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল হকের সীমাহীন অনিয়ম, অব্যস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে বিচার দাবি করেছেন।
অভিযোগে বলা রয়েছে, তিনি প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য সরকারী বিধিবিধান অনুযায়ী যে ধরনের যোগ্যতার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা নেই। তিনি সম্পূর্ণরুপে জাল, ভুয়া ও তঞ্চকতাপূর্ণ সার্টিফিকেট সৃজন করে যুগ-যুগ ধরে সরকারী বেতন-ভাতা ভোগ করে মূলত. সরকার ও জনগণকে প্রতারিত করে চলছেন।
অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, প্রধান শিক্ষক নুরুল হক ছাত্রছাত্রীদের জন্যে বরাদ্দকৃত বিনামূল্যের সরকারী বই টাকা ছাড়া দিয়েছেন এমন কোন ঘটনা এ শিক্ষকের কর্মময় সময়ের উদাহরণ নেই। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ডায়রী দেয়ার নামে প্রতিটি ছাত্রছাত্রী হতে অর্থ আদায় করে চলছেন। এটি যেন তার কাছে একটি সহজ, স্বভাব নিয়ম কিংবা বাধ্যকর আইনে পরিণত হয়েছে।
ছাত্রছাত্রীদের জন্যে সরকারের বরাদ্ধকৃত উপবৃত্তির টাকা ভুয়া ছাত্রছাত্রীর তালিকা সাজিয়ে এবং নিজের আত্মীয় স্বজনের নামের মোবাইল নম্বর দিয়ে আত্মসাত করছেন। যাতে বিদ্যালয়ের প্রকৃত ও সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রছাত্রী সরকারী সুযোগ-সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়ে চলছে। শুধু তাই নয়, এ বিদ্যালয়ে পড়েননা কিংবা ভর্ত্তি নেই এমন নামও ছাত্রছাত্রীর তালিকায় সাজিয়ে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত করছেন নুরুল হক। ২০২২ সালে চতুর্থ শ্রেণীর ৪০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্ত্তি রয়েছে। কিন্তু, উপবৃত্তির ৬০ জনের ভুয়া তালিকা সাজিয়ে টাকা উত্তোলন করেন।
উপবৃত্তির জন্যে সরকারের বরাদ্ধ করা ল্যাপটপ বিদ্যালয়ের পরিবর্তে নিজের বাড়িতে রেখে তার পুত্রকে দিয়ে এসব দুর্নীতি ও অনিয়মাবলী সংঘটিত করছেন। বিদ্যালয়ে কোন নেটসংযোগ না থাকার পরেও একটি মডেমকে বিদ্যালয়ের কাজে ব্যবহার দেখিয়ে ভুয়া ডাটা বিল করে সরকারী অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।
প্রধান শিক্ষক নুরুল হক বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিদ্যালয়ে না রেখে নিজের বাড়িতে রেখে সেসব নিজের মতো করে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে ব্যবহার করছেন।
এছাড়া কোন ছাত্র-ছাত্রী যে কোন শ্রেণীতে ভর্তি হতে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা। তাছাড়া পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষা শেষে পাশের সনদ প্রদান করতেও টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অপরদিকে, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী না হয়েও মোটা অংকের বিনিময়ে সার্টিফিকেট প্রদান করছেন তিনি। বিদ্যালয়ে পিয়ন নিয়োগের আশ^াস দিয়ে একাধিক ব্যক্তি থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। যাতে সরকার ও বিদ্যালয়ের সুনাম ও সুখ্যাতি বিনষ্ট হয়ে চলছে।
বিগত ৬ বছর ধরে বিদ্যালয়ের কোন ধরনের দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্ম না করেও সব ধরনের সরকারী বরাদ্ধ লুটপাট করে নিয়েছেন তিনি। এছাড়া কোন জাতীয় দিবস সরকারী নিয়মনীতি অনুযায়ী পালন না করেও সে খাতেও ভুয়া বিল ভাউছার দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক নরুল হক। অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষক নুরুল হক বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় শুধুমাত্র উপস্থিতি থাকার সই স্বাক্ষর করে শ্রেনী শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ না নিয়ে অন্যত্র নিজের ব্যক্তিগত কর্ম ক্রিয়া সম্পাদন করেন।
স্কুল কমিটিতে নিজের মেয়েসহ নিজের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও পছন্দসই লোকজন নিয়ে কমিটি গঠন করে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন। তার লালিত ও পালিত লোকজন দিয়ে কমিটি করায় এলাকার কেউ প্রধান শিক্ষক নুরুল হকের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস রাখেননা।
রাতের বেলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দপ্তরে বিভিন্ন লোকজন নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত আড্ডাস্থলে পরিণত করে। যাতে একটি সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সভ্যতা ও শৃঙ্খলা চরমভাবে বিনষ্ট হয়ে চলছে।
বিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষিকাগণ প্রধান শিক্ষক নুরুল হকের সংঘটিত অন্যায় ও অবৈধ কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নানাভাবে লাঞ্চনা, বঞ্চনা ও নাজেহালের শিকার হয়েছেন। সঙ্গতকারণে কোন শিক্ষিকা এসব নিয়ে এখন আর কোন ধরনের প্রতিবাদের সাহস পাননা। উপরোক্ত বিষয়ে সাবেক শিক্ষক গোলাম মাওলা প্রতিবাদ করতে গিয়ে নানাভাবে হয়রানি ও নাজেহালের শিকার হতে হয়েছে।
বিগত সময়ে একাধিকবার তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিরা সতর্ক করলেও তিনি বিন্দুমাত্র আমলে নেননি সেসব নির্দেশনা কিংবা সরকারী বিধি বিধান।
এছাড়া বিগত ২০২২ ও ২৩ বর্ষে কোন আয়োজন, অনুষ্ঠান ও কেনাকোটাসহ কোন আচারাদী না করেও বিভিন্ন তারিখের ভুয়া বিল ভাইছার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। তারা জানান, ইতোমধ্যেও এরুপ ভুয়া বিল ভাইছারের ঘটনা ঘটনাচ্ছেন তিনি।
তবে এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক নুরুল হককে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন না ধরায় তার কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।