নোয়াখালী:
শনিবার (৭ জানুয়ারী) দুপুরে সরেজমিনে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ড ও শিশু ওয়ার্ড রোগীতে ভরপুর। তৃতীয় তলার শিশু ওয়ার্ডে ঠান্ডাজনিত অসুস্থতার কারণে ভর্তি করা হয়েছে চার মাস বয়সি শিশু ফাহিমকে। পাশ্ববর্তী জেলা লক্ষীপুরের মৌলভীরহাট থেকে আসা ফুটফুটে শিশু ফাহিমের নিউমোনিয়া হয়েছে বলে হাসপাতালের রেজিস্ট্রার সূত্রে জানা যায়। রক্তে অক্সিজেনের লেভেল কম থাকায় নেবুলাইজেশন করে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইনজেকশন, স্যালাইন পুশ করতে হাতে ক্যানুলা করে দেওয়া হয়েছে।
শিশু ফাহিমের মা ফাতেমা বলেন, ঠান্ডা-কাশি সর্দি, শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় প্রথমে লক্ষীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা এখানে রেফার করেন। এখানে আসার পর নিউমোনিয়া হয়েছে জানিয়ে ভর্তি করা হয়। গত ৬ দিন থেকে তারা এখানে ভর্তি আছে। এখনো সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেনি।
একই ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা আড়াই বছর বয়সী শিশু মাহবুবুর রহমানের মা খালেদা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলের জন্মগতভাবে ঠাণ্ডাজনিত রোগের সমস্যা। সামান্য ঠান্ডা লাগলেই সে অসুস্থ হয়ে যায়। গত মাসে তার জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে এখানে ১৬ দিন ভর্তি ছিলাম। তারপর অনেকটা সুস্থ হলে আমরা বাড়ি নিয়ে যাই। বাড়িতে গিয়ে ৭ দিনের মাথায় আবারো অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা পুনরায় তাকে এখানে ভর্তি করাই। গত ৬ দিন থেকে সে এখানে চিকিৎসাধীন।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত মাসে হাসপাতালে বিভিন্ন রোগে শিশু-বৃদ্ধসহ মোট ১৪৪ জনের মৃত্যু হয়। যার মধ্যে ০ থেকে ৪ বছর বয়সী ৫১ জন এবং ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী ১ জন শিশু রয়েছে। এছাড়া ৫০ বছরের উর্ধ্বে ৬৬ জন রয়েছে। এদের অধিকাংশই ঠান্ডাজনিতসহ বিভিন্ন রোগে মৃত্যু হয়েছে।
গত ডিসেম্বরে হাসপাতালের তৃতীয় এবং চতুর্থ তলায় শিশু ওয়ার্ডে ৯২৭ জন ভর্তি হয়েছে। গত ৭ দিনে ১২৯ জন শিশু ভর্তি হয়েছে যার মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন শিশু ওয়ার্ডে ৪০/৫০ জন ভর্তি হয় বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ড থেকে জানা যায়, গত ডিসেম্বরে সেখানে ৯৫০ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন যাদের অধিকাংশই ছিল শিশু। এছাড়া গত ৭ দিনে ১০৯ জন রোগী এ ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। শনিবার (৭ জানুয়ারী) বিকেল পর্যন্ত এ ওয়ার্ডে মোট ৪০ জন ভর্তি ছিল যার মধ্যে ৩৮ জনই শিশু রোগী।
৩য় তলার শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স আকলিমা আক্তার বলেন, আমরা চেষ্টা করি সব রোগীকে সমান সেবা দিতে। শিশুদের সেবা দিতে আরো বেশি সময় প্রয়োজন হয়। তবে আমাদের নার্স সংকটের কারণে অনেক সময় আমরা হিমশিম খেতে হয়। কখনো কখনো ১ টি শিশু খারাপ হয়ে গেলে তার পেছনেই একজন নার্স কাজ করতে হয়। শিশু ওয়ার্ডে আরো নার্স বাড়ানো প্রয়োজন।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালটেন্ট ডাঃ ইয়াকুব আলী মুন্সি বলেন, শীতের শুরু থেকে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের হাসপাতালে শিশুদের ভর্তি করানোর পরপরই আমরা তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করি। অধিকাংশ শিশুই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। তবে শীতকালে শিশুদের অভিভাবকদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে যাতে তাদের গায়ে ঠান্ডা না লাগে।
শিশু ওয়ার্ডে জনবল সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, এই হাসপাতালে অনেক রোগীর সেবা দিতে হয়। এত রোগীর সামাল দিতে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ডাক্তার, নার্স ও প্রয়োজনীয় জনবল আরো প্রয়োজন।