• মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
আমাদের দেশকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে: মো. শাহজাহান ফ্যাসিস্ট শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে: জামায়াত নেতা ইয়াছিন আরাফাত নোবিপ্রবিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত পাসপোর্টে হয়রানি বন্ধ ও জনগনের সাথে সুসম্পর্ক উন্নয়নে বিদায়ী জেলা পুলিশের ডিআইও-১ এর প্রশংসনীয় উদ্যোগ! নোয়াখালীতে “দ্যা হান্ড্রেড বল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট” এর শুভ উদ্বোধন সুধারামে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ প্রশাসন সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে- কামরুল ইসলাম ব্যবসায়ীদের আর্তনাদ কবিরহাটে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম ( বিএমএসএফ)’র  সাধারণ সভা জেলা প্রশাসকের কাছে ৪ শত কম্বল হস্তান্তর করলো ‘আশা’ সোনাপুর পৌর বাসস্ট্যান্ডটি যেভাবে মার্কেটে পরিণত হচ্ছে

রক্তে রাঙানো দিন আজ

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

বাঙালি জাতির মননে অনন্য মহিমায় চিরভাস্বর ২১ ফেব্রুয়ারি। ২১ ফেব্রুয়ারি মানে বিশ্বে মাতৃভাষার জন্য নির্ভয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দেওয়ার প্রথম ইতিহাস সৃষ্টির দিন। বাঙালির ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় শোকের দিন। ইতিহাসের পাতায় রক্ত পলাশ হয়ে ফোটা সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সফিউর, আউয়াল, অহিউল্লাহর রক্তে রাঙানো দিন আজ। রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস; আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি…’ শরীরে শিহরণ জাগানো এ গানে আজ শোকের ও গৌরবের বার্তা ধ্বনিত হবে আকাশে-বাতাসে। প্রভাতফেরিতে সারিবদ্ধভাবে হাতে ফুল নিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবে জাতি।

ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এছাড়া কালোব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শহীদ মিনার খুলে দেওয়া হয়।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

ভাষাশহীদদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা, মায়ের ভাষা। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের যে সংগ্রামের সূচনা সেদিন ঘটেছিল, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। ২১ ফেব্রুয়ারি তাই বাঙালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীক। প্রতিবারের মতো এবারও যথাযথ মর্যাদায় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হচ্ছে মহান শহীদ দিবস। বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৫২ সালের এদিন বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন দামাল ছেলেরা। তাদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা পেয়েছিল পূর্বপাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষার স্বীকৃতি। এরপর থেকে ভাষা শহীদ দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়ে আসছে দিনটি। পরবর্তী সময়ে ২১ ফেব্রুয়ারি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার দিবসের স্বীকৃতি।

১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ২১ ফেব্রুয়ারিকে এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে একযোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন ময়দানে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমিনের সভাপতিত্বে জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা দেন- ‘উর্দু এবং শুধু উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ মূলত খাজা নাজিমুদ্দিনের এ ভাষণই ভাষা আন্দোলনের দাবানল সৃষ্টি করে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাংলার ছাত্র-শিক্ষক-জনতাসহ আপামর মানুষ। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় ধর্মঘটসহ বিক্ষোভ। একুশে ফেব্রুয়ারিতে পূর্বপাকিস্তানজুড়ে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। একপর্যায়ে ছাত্রদের দৃঢ়তায় ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ঢাকার পলাশীর আমতলায় (বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের সড়ক) এলে নির্বিচারে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। এতে নিহত হন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, সফিউরসহ নাম না জানা আরো অনেকে। এরপর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে ভাষা আন্দোলন। অবশেষে বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই বাঙালি জাতির চরম জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে। এ পথ ধরেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্ম নেয় লাল-সবুজের বাংলাদেশ। বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার স্বীকৃতি আদায়ের দিনটি পালনে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি জাতীয় দিবস হিসেবে দিনটিতে সরকারি ছুটি রয়েছে। শহীদদের স্মরণে দিনটিতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও শোকের কালো পতাকা উড়ানো হচ্ছে। সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বেতারে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ ছাড়াও প্রচার করা হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার।

দিবসটি উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আলোচনা সভা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আবৃত্তি, নান্দনিক হস্তাক্ষর লেখা প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রাজনৈতিক দল ও সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। এছাড়া বাংলা একাডেমির উদ্যোগে মাসজুড়ে চলছে অমর একুশে বইমেলা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ
No comments to show.