জানা যায়, প্রতিবছর শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি পাখি আসতে শুরু করে। সাধারণত শীতে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে পাখিরা নোবিপ্রবির ময়না দ্বীপে আসে। নোবিপ্রবির ময়না দ্বীপ নিরাপদ আশ্রয়স্থল হওয়ায় অতিথি পাখিরা এখানে অবস্থান করে।
ময়না দ্বীপ ঘুরে দেখা যায়, কিছু পাখি ঝাঁক বেধে আপন মনে সাঁতার কাটছে। কিছু কচুরিপানা ও শাপলার পাতায় আপন মনে বিশ্রাম নিচ্ছে। কিছু আবার আকাশে উড়ছে। আবার পরক্ষণেই ঝাঁপ দিচ্ছে জলে। পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখর চারদিক। সবুজ গাছপালা আর দিনভর ময়না দ্বীপের জলে পাখিদের ভেসে বেড়ানো ও জলকেলি খেলা চলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধ্যা হলে পাখিগুলো আশ্রয় নিচ্ছে ময়না দ্বীপের গাছে। সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস থেকে অধিকাংশ হাঁসজাতীয় পাখিরা আসতে শুরু করে। তবে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পাখি দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী প্রগতি বৈদ্য বলেন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ এক একরের সৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না। তার মধ্যে আমাদের শীতকালীন সৌন্দর্যের অন্যতম কারণ হলো অতিথি পাখির আগমন। অতিথি পাখির এ কলকাকলি ক্যাম্পাসকে মুগ্ধ করে রাখে এবং প্রতিটি শিক্ষার্থী এতে মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করে।
ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ মাহমুদ ফুয়াদ বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসের সব থেকে সুন্দর দিক হলো শীতকালে অতিথি পাখির আগমন। সকাল বিকেলে আমরা আড্ডা এখানে আড্ডা দেই। পাখির কলকাকলিতে আমাদের গানের সুর আসে। আমরা গান গাই, আড্ডা দেই আমাদের ভালো লাগে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আবাসিক হলের শিক্ষার্থী সায়মা জাহান ঈশিতা বলেন, বাংলাদেশের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন আছে কিনা আমার জানা নেই, যেখানে আবাসিক হলে থেকে অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। আমি বঙ্গমাতা হলে থাকে। এখানে আমাদের ঘুম ভাঙে অতিথি পাখির কিচিরমিচিরে। যে দেশে ধুলাবালি ছাড়া কিছুই দেখা যায় না সেখানে অতিথি পাখির কিচিরমিচিরে ঘুম ভাঙা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। আমরা গর্ব করে বলতে পারি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে খুব সুন্দর পরিবেশে বসবাস করছি।
ফারদিন শাওন নামের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, অতিথি পাখি হচ্ছে আমাদের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যের অংশ। এই অতিথি পাখিকে উপলক্ষে ক্যাম্পাসে দর্শনার্থীর সংখ্যা আগের থেকে বেড়ে গেছে। নোয়াখালী ও তার আশপাশের মানুষেরা অতিথি পাখি দেখতে আসে এতে আমাদেরও ভাল লাগে। আমাদের উচিৎ এই সৌন্দর্য ধরে রাখা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনেরও উচিত অতিথি পাখি সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
লেকগুলোতে অতিথি পাখিদের বিচরণ শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরই নয়, এখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদেরও মন কাড়ে। যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্তি পেতে আর ধুলাবালি মুক্ত বায়ুতে নিঃশ্বাস নিতে শীতের এই সময়ে ক্যাম্পাসে ভিড় করছেন শত শত পাখিপ্রেমী। তাদেরই একজন সুমাইয়া আক্তার। তিনি বলেন, পাখি দেখতে নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে এসেছি। সবুজ এই ক্যাম্পাসে পাখির বিচরণ সত্যিই মনোমুগ্ধকর। সারাক্ষণ পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত চারপাশ। যা দেখে খুবই ভালো লাগল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মহিনুজ্জামান বলেন, অতিথি পাখি আমাদের পরিবেশের জন্য উপযোগী। এক ধরনের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে এরা ফসলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। যদি নিরাপদ ও দর্শনার্থীর কোলাহল কম থাকে তাহলে পাখির সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম বলেন, শীতের মধ্যে অতিথি পাখির আগমন আমাদের জন্য খুবই আনন্দের। বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক অতিথি পাখি আসে। সেখানে মানুষজন ঘুরতে যায়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও পাখি আসে। পাখির ডাকে এখানে সুন্দর ছন্দ তৈরি হয়। যা গানের সুরের মতো। সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান রঙের পাখি আসে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অতিথি পাখির দিক থেকে সমৃদ্ধ হচ্ছে এটা আমাদের সৌভাগ্য। আমরা অতিথি পাখির জন্য অভয়ারণ্যে ঘোষণা করছি। কেউ যেন পাখি শিকার না করে সেই জন্য বিভিন্ন সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হবে। কেউ যেন ডিস্টার্ব না করে সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।