আমেরিকার ভিসা নীতির কারণে আওয়ামী লীগের কিছু নেতার কাপড় নষ্ট হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা।
সোমবার (৫ জুন) রাত পৌনে ৯টার দিকে পৌরসভার নিজ কক্ষ থেকে নিজের ফেসবুক আইডিতে লাইভে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন
কাদের মির্জা বলেন, বিএনপির কিছু দালালের তাবেদারিতে আমেরিকা বাংলাদেশে ভিসা নীতি ঘোষণা করার পর আমাদের কিছু কিছু নেতা যাদের আমেরিকায় বাড়ি, গাড়ি ও অর্থ পাচার করে তাদের ভয়ে কাপড় নষ্ট হয়ে গেছে। আমি নেত্রীর কাছে অনুরোধ করব আমেরিকার ভিসা নীতিতে ভীত এইসব কথিত নেতাদের নমিশেনও দেখার দরকার নেই। তাদের আওয়ামী লীগেও রাখার দরকার নেই।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আরও বলেন, আল্লাহ না করুক আওয়ামী লীগের কিছু হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আপনি (শেখ হাসিনা) ও আমরা তৃণমূলের কর্মীরা। আমরা নিজেদের স্বার্থে দলের জন্য সর্বোচ্চ উৎসর্গ করে কাজ করব। অতীতের ন্যায় এবারও আওয়ামী লীগের নির্বাচনে আমরা মাঠে থাকব। এসব সুবিধাভোগী লুটপাটকারীদের নমিনেশন না দিয়ে দল থেকে বিতাড়িত করে আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করুণ।
আমেরিকার এসব ভিসা নিষেধাজ্ঞা এর আগেও নাইজেরিয়া, উগান্ডা, সোমালিয়াসহ কয়েকটি দেশে দিয়েছিল কিন্তু সেসব দেশে এসব নিষেধাজ্ঞার কি প্রভাব পড়েছে? বলে প্রশ্ন রেখে কাদের মির্জা বলেন, আমেরিকা আমাদের দেশের মানবাধিকারের কথা বলে সেই আমেরিকার অবস্থা তো সারা বিশ্ব জানে। তাদের অলিতে গলিতে, স্কুলে, হোটেল রেস্তোরাঁয়, প্রতিনিয়ত বন্দুকের গুলিতে মানুষ মারা যাচ্ছে, বৈষম্যের শিকার হয়ে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ মারা যাচ্ছে, আমাদের দেশের ছাত্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ প্রতিনিয়ত খুন হচ্ছে আর তারা আসছে আমাদেরকে মানবাধিকারের ছবক দিতে। ১৯৭৫ -এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা, ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ শেখ হাসিনাকে যখন ১৭ বার হত্যা করতে চেয়েছিল তখন মানবতাবাদীরা কোথায় ছিল? তখন তাদের চেতনা জাগ্রত হয়নি কেন?
বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে কাদের মির্জা বলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমেরিকাসহ অনেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছেন, ইতিহাস পর্যালচনা করলেই দেখবেন- বাংলাদেশে যদি কখনো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় সেটা একমাত্র বঙ্গন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার শাসন আমলেই হয়েছে। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেনি। ২১ বছর যাবৎ সামরিক জান্তার উত্থানে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? ২১ বছর আমাদের নেতাকর্মীরা ভোটকেন্দ্রে যাওয়া তো দূরের কথা আমাদের ২৫ হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছে। লাখ লাখ নেতাকর্মী এলাকায় পর্যন্ত আসতে পারেনি।
বিএনপি জামায়াতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অন্যায্য উল্লেখ করে কাদের মির্জা বলেন, বিএনপি- জামায়াতের ভাইরা ২১ বছর পর আসবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলতে, সারা বিশ্বের কোথাও নেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই! আপনারা কোথা থেকে বের হইছেন? মাত্র সাড়ে ১৪ বছর গেছে, ২১ বছর পর আসিয়েন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলতে।
জেলা আওয়ামী লীগের কোনো গুণগত পরিবর্তন আসেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, নোয়াখালীর স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে ইতোপূর্বে আমি অনেক কথা বলেছি, আপনারা শুনেছেন সব। আমি কথা বলেছিলাম আমার দলের স্বার্থে, আওয়ামী লীগের স্বার্থে। আমাদের ত্রুটিগুলো শুদ্ধ হয়ে আমাদের দলটা ভালো একটা পর্যায়ে চলত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, কষ্টের সঙ্গে বলতে হচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের কোনো গুণগত পরিবর্তন আসেনি। নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো অনুমোদন হয়নি। অথচ স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীরা বলছে টাকা নিয়ে কমিটিতে নেতা নির্বাচন করে বাণিজ্য শুরু করছে।
কাদের মির্জা আরও বলেন, আমি এখনো দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি নোয়াখালী জেলার এমপিদের মধ্যে মাত্র একজন শয়নে স্বপনে জাগরণে মনে প্রাণে আওয়ামী লীগ করে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শ লালন করে। তিনি হলেন আমাদের জননেতা ওবায়দুল কাদের এমপি। আর দু’একজন এমপি আছেন তাদেরও দলের প্রতি আন্তরিকতা আছে, মমত্ববোধ আছে তাছাড়া আর সব এমপি আপনা লীগ মানে নিজের স্বার্থের দল করেন।
তিনি বলেন, আজকে নোয়াখালী জেলা পরিষদে, টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। উন্নয়ন বরাদ্দসহ সব অর্থ অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ হচ্ছে। কে নেবে কার খোঁজ? দেখবে কে? নিয়ন্ত্রণ করবে কে? মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনার কোম্পানীগঞ্জে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় দুর্নীতি ও মাদকের রমরমা ব্যবসা চলছে। আর নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু দুর্নীতিবাজ আওয়ামী পন্থীর সহযোগিতায় ভিসি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে জামাত-বিএনপির আস্তানায় রূপান্তরিত করেছে।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নসহ মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে উল্লেখ করে কাদের মির্জা বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নসহ মানুষের জীবন মান উন্নয়ন হয়েছে শতভাগ। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসদমসহ অনেকগুলো সফলতা আছে শেখ হাসিনার যা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু দুটি বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আপ্রাণ চেষ্টার পরও কিছু অসাধু লোকের কারণে সফল হতে পারেনি; তা হলো- দুর্নীতি ও মাদক।
‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেও মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি আর অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে দুর্নীতি দূর করতে পারেনি। এই দুটি দিকে সফলতা আসেনি এখনো। এটা শুনে আবার বিএনপি’র ভাইরা খুশি হবার কারণ নেই। আপনারা দুর্নীতিতে ব্যাক টু ব্যাক পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন সেটা ভুলে যাবে না।
শেখ হাসিনার হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ উল্লেখ করে কাদের মির্জা বলেন, বৈশ্বিক সংকট ও নানাবিধ সমস্যার কারণে সাময়িক কিছু সমস্যা দেখা দিলেও তা সমাধান হবে ইনশাহ আল্লাহ। আপনারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস রাখুন শেখ হাসিনার হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের বিকল্প চিন্তা করাই যাবে না। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে সরকারকে সহযোগিতা করুণ, আল্লাহর উপর ভরসা রেখে শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখুন।