নোয়াখালী প্রতিনিধি:
নোয়াখালীতে বিদ্যুৎ বিতরণে চলছে চরম বৈষম্য। গত কয়েক দিন ধরে তীব্র গরমের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় দিশেহারা সাধারণ মানুষ। অথচ এর মধ্যেই ‘ভিআইপি লাইন’ থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিয়ে চলছে বাণিজ্য মেলা, সুপার মার্কেট ও সরকারি আবাসিক এলাকা। ক্ষুব্ধ শহরবাসী নির্দিষ্ট লাইনে অগ্রাধিকার না দিয়ে বিদ্যুতের সমবণ্টনের দাবি জানিয়েছেন।
শহরের বাসিন্দারা বলছেন, নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর বিভিন্ন এলাকায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। তবে এমন ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের আওতার বাইরে রয়েছে সুপার মার্কেট, বাণিজ্য মেলা, সরকারি দপ্তর, সার্কিট হাউস, টেনিস কমপ্লেক্স ও সরকারি আবাসিক এলাকা। এসব জায়গায় ‘ভিআইপি লাইন’ থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এর ফলে অন্যান্য জায়গায় চাহিদামতো বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হয় না।
মাইজদীর কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ সুষমভাবে বিদ্যুৎ বণ্টন করছে না। তারা ‘ভিআইপি ফিডারে’ ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সুবিধা দেয়। অথচ লক্ষ্মীনারায়ণপুর, সোনাপুর, দত্তের হাট, ফকিরপুর, কাদির হানিফ, মাইজদী বাজারসহ কয়েকটি এলাকায় এক ঘণ্টা পর পর দুই ঘণ্টা লোডশেডিং এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণে চরম বৈষম্য চলছে। লোড ম্যানেজমেন্ট বলতে এখানে দৃশ্যমান কিছুই নেই।
লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, ‘লোডশেডিংয়ে আমাদের ভোগান্তি চরমে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০-১২ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। অথচ এর মধ্যেই কেউ কেউ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন।’
দত্তেরহাট এলাকার নাছির উদ্দিন রায়হান বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ এসব বৈষম্য আর অনিয়ম করে ইচ্ছাকৃত জনরোষ তৈরি করছে। সংকটের মধ্যে বিদ্যুতের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা জরুরি।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা তারেকশ্বর দেবনাথ নান্টু বলেন, বিদ্যুতের এই সংকটে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে রেখে কিছু কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী সুবিধা ভোগ করছেন। এটি সম্পূর্ণ অনৈতিক।
সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নুর আলম ছিদ্দিকী বলেন, কয়েকটি দপ্তরের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু নেতার পকেট ভারী করার জন্য বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ মেলায় বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে। এ নিয়ে কথা উঠলে তারা ক্ষেপে গিয়ে আলোকসজ্জা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর এদিকে সাধারণ মানুষ লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে আছেন।
নোয়াখালী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে জেলা শহরে প্রতিদিন গড়ে বিদ্যুতের চাহিদা ৩০ থেকে ৩৫ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ১২ থেকে ১৫ মেগাওয়াট। এ জন্য ১৮ থেকে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি শামাল দিতে লোডশেডিং বেড়েছে। অন্যদিকে বর্তমানে নোয়াখালী সুপার মার্কেটে দেড় মেগাওয়াট ও বাণিজ্য মেলায় ১৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। বিউবো অবশ্য বলছে, বিদ্যুতের চাহিদা ও প্রাপ্যতার সমন্বয় করতে বিভিন্ন এলাকায় পর্যায়ক্রমে লোডশেডিং করা হচ্ছে।
নোয়াখালী বিউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (মাইজদী) মো. নুরুল আমিন বলেন, নোয়াখালী চেম্বার অব কমার্সের অবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। তারা দৈনিক ১৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যয় করে। এর ফলে অন্য এলাকায় প্রভাব পড়ে না।
নোয়াখালী সুপার মার্কেটে ‘ভিআইপি লাইনে’র সংযোগ প্রসঙ্গে নুরুল আমিন বলেন, সুপার মার্কেটে প্রতিদিন এক থেকে দেড় মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা আছে। সেখানে ভিআইপি লাইনের সংযোগ আগে থেকেই দেয়া ছিল। এখন চাইলেই তো আর তা বাদ দেয়া যায় না।
জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আজ (গতকাল) বাণিজ্য মেলার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে রাত ৮টার পর দোকান ও সুপার মার্কেট বন্ধ করতে নিদর্শনাও দেয়া হয়েছে।’